জাহাজে করে গাঙচিলদের সাথে যখন সেন্টমার্টিনে পৌছালাম স্বচ্ছ নীল পানি দেখে হলিউডের মুভিতে কিংবা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আর ডিসকভারী চ্যানেলে দেখানো সেইসব নীলসাগরের কথা মনে পড়ে গেল। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধতা এসে গেল। সাগরে জেগে উঠা এক জনপদ যেন। সেন্টমার্টিনে যাবার কথা শুনে ইকা আপা বলেছিল সায়রীতে উঠতে পার। তাহসিন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে রিসোর্টের একটা কটেজ বুক দিয়ে রেখেছিলাম আগে থেকেই। ঘাটসংলগ্ন রাস্তাটা একটু গিঞ্জি আর মানুষ-দোকানপাটে ঠাঁসা, গ্রামীণ জনপদ-ধানক্ষেত পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম সেখানে। কটেজে ঢুকে ব্যাগ রেখেই চলে গেলাম বীচে। যেখানে সাগর থেমেছে সেখানে সায়রীর শুরু। বীচে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা তিনজন (আমি, শাওন আর ফারুক) আবার বেড়িয়ে পড়লাম। আমাদের রিসোর্টের বীচ থেকে শুরু করে ডানদিকের পুরো বীচ ধরে ঘুরপথে আবার রিসোর্টে ফিরে আসতে ঘন্টা দুয়েকের মত সময় লাগল। যেদিকটায় আমরা উঠেছিলাম সেদিককার সবচে ভাল দিক হল মানুষের ভীড় তেমন নেই বললেই চলে। আপনি আপনার মত করে নির্বিঘ্নে অবকাশ যাপন করতে পারবেন। দিনে স্বচ্ছ নীল পানি, অনিন্দ্যসুন্দর বীচ, শেষ বিকেলের সূর্যাস্ত।
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা বিপজ্জনক পথ ধরে চলতে লাগল হিমালয় রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস যার রঙ আমাদের ভার্সিটির সবুজ বাসটার মত।এই বাসজার্নির অভিজ্ঞতার কাছে রোলার কোস্টার হার মানতে বাধ্য । মাঝে একবার একটা হোটেলে যাত্রাবিরতি দিল যেটাতে ননভেজদের জন্য কোন আইটেম নেই। সব ডালের আইটেম। ডালের শালা, ডালের সম্বন্ধি, ডালের খালা, ডালের খালাত ভাই – এই অবস্থা। এরপর স্কুল পিকনিকের বাসের মত আবার বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে ডেকে এনে বাসে তুলে বাস চলতে শুরু করল। মানালী পৌঁছলাম সন্ধ্যা সাতটার দিকে। একজন গাইডমতন লোক আমাদের স্টেশন থেকে মল রোডে নিয়ে গেল। একেবারে মল রোডের উপরেই একটা হোটেলে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে মার্বেল সাইজের মিষ্টান্ন খেলাম মল রোডের বড় উঠোনের মত জায়গাটায় যেখানে নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিন চার ফুট বরফ থাকে। একটা বৃদ্ধ লোক এক কোণায় বসে মোহিণী কন্ঠে একটা গান গাইছে। রাতের মল রোড ঘুরে ঘুরে একেবারে খেয়েদেয়ে হোটেলে ফিরলাম। ভ্রমণজনিত ক্লান্তিতে গভীর ঘুম হল। সকালে উঠেই হোটেলের জানালা খুলে দেখি বহু দূরের একটা বরফে ঢাকা শাদা পাহাড় সূর্যের আলোয় চকচক করছে।পৃথিবী কত সুন্দর! Continue reading “Tour De India :: S01E06”
সামিকে অনেক বুঝাইলাম । দেখা কানাডা যাইস না। কানাডার মেয়ে সানি লিওন সব ছেড়েছুড়ে আমাদের দেশে আসতেছে আর তুই কুন দুঃখে কানাডা যাইতেছস । কিন্তু ওমর সামী আমাদের কথা শুনলেন না । তিনি শুনলেন পামেলা এন্ডারসনের কথা । কি আর করা, একটা ফেয়ারওয়েল তো দেয়া লাগে । আমাদের যাবার কথা ছিল কক্সবাজার । সবাই একসাথে শেষবারের মতো কিছু কোডাকোডিহীন সময় কাটানো । সব দিনক্ষণ ঠিক ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সকালে বাসায় উঠব। Continue reading “আপ্নে ময়মনসিংহ গেছুইন !”
শিমলা
কালকা স্টেশনে নেমেই শিমলামুখী অপেক্ষামাণ টয় ট্রেনের টিকেট করিয়ে নিলাম । টয় ট্রেন পাব সেটা আমাদের কল্পনায়ও ছিল না । যদিও ভাড়া একটু বেশী, তবুও টয় ট্রেন পেয়ে মহাখুশি হলাম । প্রকৃতি দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে । সারাটা পথ জুড়ে পাহাড় বেয়ে চলা টয় ট্রেনের স্পীড কম। ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার এর কিছু বেশী । পথ দিয়ে যেতে যেতে পাহাড়ে গায়ে আটকে পড়া সাদা মেঘ, সুড়ঙ্গ দিয়ে যাবার সময় সুরঙ্গের গা বেয়ে পড়া ঝর্ণার পানি, প্রতিটা সুড়ঙ্গে ঢোকামাত্রই পিছনের বগিতে থাকা একদল পিচ্ছির হৈ হোল্লোড়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ফুট উপরের ছবির মত সুন্দর এক স্টেশনে মিনিট দশেকের যাত্রাবিরতি – যা কিছু মনোমুগ্ধকর । Continue reading “Tour De India :: S01E05”
বাঙ্গালী খেতে দিলে শুতে চায়, শুতে দিলে কাপড় ধুতে চায় । ঘুম থেকে উঠে ক্যান্টিনে নাস্তা সেরে রুমে এসে শুভকে বললাম, শুভ তোরা কাপড় চোপড় কিভাবে ধোস ? সে বলল, ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দেই, আধা ঘন্টা পরে নিয়ে আসি । তো আমি আমার দুদিনের ময়লা কাপড় নিয়ে তার সাথে গিয়ে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে এলাম । এরপর বের হলাম নেহেরু পার্ক ঘুরে দেখতে । পুরোটা দেখা অসম্ভব ছিল, তাই যতটা সম্ভব ঘুরে দেখলাম । বিশাল পরিচ্ছন্ন পার্ক । সেদিন ছিল হলিডে । বেশ কয়েকটা ফ্যামিলি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বল-খাবার-দাবার-বিছানা এনে সংসার পাতিয়ে ফেলল পার্কে, কেউ করছে জগিং, কেউ বসে গল্প করছে । Continue reading “Tour De India :: S01E04”
দিল্লীতে ট্রেন থেকে নেমেই এমন সুন্দর, ঝাকুনীবিহীন ও খানাপিনাময় ভ্রমণ উপহার দেবার জন্য আমার ইচ্ছে করেছিল ভারতের রেলমন্ত্রীকেও আবার বিয়ে দিয়ে দেই। দিল্লী স্টেশন নেমে আগে থেকে অপেক্ষা করতে থাকা শুভ ও নেপালী অমিত কে নিয়ে চলে গেলাম নিজামউদ্দিন স্টেশন। সেখান থেকে সোজা আগ্রার সুপারফাস্ট ট্রেন ধরলাম। তিন ঘন্টা পর আগ্রা পৌঁছি। আগ্রা স্টেশনে নেমেই দিল্লীর ফিরতি টিকেট করে নিলাম। স্টেশনের বাইরে থেকেই সরকারী কিছূ ট্যাক্সি ছাড়ে সরাসরি তাজমহলের উদ্দ্যেশ্যে। ১২০ টাকা যাওয়া, আর সারাদিনের জন্য আগ্রার দর্শনীয় স্থান ঘুরতে চাইলে ৫০০ নিবে। খুব একটা বেশী মনে হলনা। সারাদিনের জন্য ট্যাক্সি নিয়ে আগ্রার পথে ঘুরা শুরু। পথে একটা হোটেলে থেমে হায়দ্রাবাদী বিরিয়াণীর স্বাদ নিলাম। যেমন পরিবেশনা, তেমনই স্বাদ । Continue reading “Tour De India :: S01E03”
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য নিউ মার্কেট। ব্যাপক দরদাম করে ৩০ টাকায় রিকশা ঠিক করা হল। দু মিনিট পরেই রিকশাওয়ালা যখন নামিয়ে দিল তখন বুঝতে পারলাম আমাদের পরের গলিতেই নিউ মার্কেট ! মাস্তান হোটেলেপ বন্ধ পেয়ে সেখানে আরেকটা হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর কিছুক্ষণ চার্লি চ্যাপলিন স্ট্রীট ঘুরাঘুরি করে দাদাবাবুদের কাছ থেকে দিক নির্দেশনা নিয়ে পাবলিক বাসে করে রওনা দিলাম কাছের ভিক্টোরিয়া পার্কের উদ্দ্যেশ্যে। দাদাবাবুরা সিলুটিদের মত না, একদম ঠিক ঠিক সময় বলেন। Continue reading “Tour De India :: S01E02”
ইমিগ্রেশন পার হয়ে কলকাতা রওনা দিতেই শুরু হল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সৌদিয়া এমন ধীরগতিতে চলল, উত্তর ২৪ পরগণা পার হতেই তার ২৪ বছর লেগে গেছে। সারাটি পথ জুড়ে শুধু মমতা ব্যানার্জীর পোস্টার। এ দৃশ্য দেখে আমার নোয়াখালীতে ফেয়ার এন্ড লাভলীর এডের মত মোড়ে মোড়ে নিজের পোস্টার লাগানো এমপি একরামুল হকের কথা মনে পড়ে গেল। বুঝলাম এই পশ্চিমবংগে বিজেপি, কংগ্রেস কারো ভাত নাই। মমতা এখানকার ফাটাকেষ্ট। কলকাতা এসে চৌরংগী লেইনের একটা হোটেলে উঠলাম। হোটেল খুব একটা খারাপ না। জানালা দিয়ে সূর্যের আলো আসে, বিপরীত দিকের বাড়ীটায় বেশ কিছু কবুতর আছে। Continue reading “Tour De India :: S01E01”