আম্মু না থাকাতে বাসাটা গত দেড় মাস ধরে এক্সপেরিমেন্টাল কিচেন হয়ে আছে। রান্না নিয়ে নানা ধরণের রিসার্চ করা হয়। অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শ এড়াতে কিচেন গ্লোভস কিনছি। দুই ভাই মিলে যখন যা মন চায় রান্না করি। এতদিন মুরগী আর ডাল ছাড়া কিছু পারতাম না।

 

একঘেয়েমী আসায় একদিন মাসুদ বলল গরুর গোশত রান্না করা তেমন কঠিন না, প্রেশার কুকুরে দশবার শীষ দিলে মাংস সেদ্ধ। আদা-মশলা এইগুলা যোগাড়যন্তরই যা একটূ কষ্টের। এরপর থেকে সে দুইবার গরুর গোশত রান্না করে খাওয়াল। ধোঁয়া উঠা চিনিগুড়ার গরম ভাতে ঘি দিয়ে খেলাম একদিন। মাছ কোনদিন রান্না করি নাই, সাহস করে রুই মাছ রান্না করলাম। দেখলাম মাছ রান্না কল্পনার চাইতেও সহজ। মাঝে একদিন বোয়াল মাছ রান্না করলাম। দিন চারেক আগে ইলিশ। বোয়াল একটা ওভাররেটেড মাছ, স্বাদের দিক দিয়ে আহামরি কিছু না, শুধুমাত্র ব্রান্ড ভ্যালুর কারণে টিকে আছে। সেদিন মাসুদের এক বন্ধু আসছিল বাসায়, ঘরের লোকের মতই রান্নাঘরে গিয়ে আলুভর্তা বানানোর কাজে নেমে পড়েছিল। গতকাল মাসুদকে বললাম, আজ অফিস থেকে ফেরার পথে গোশত আনব। বাসায় ফিরে দেখি নিক্কন আর সে আদা-মরিচ-পেয়াজ কেটে বসে আছে। নিক্কন স্ব-প্রণোদিত হয়ে রান্নার প্রস্তাব দিল। এখন ও আর মাসুদ মিলে গোশত আর ডাল রান্না করতেছে। সকালে অফিসে যাবার আগে রাতের আধোয়া বাসনকোসন ধোঁয়া লাগে বলে অফিসে যেতে একটু দেরী হইতেছে ইদানীং। দেশে বসে প্রবাসের মত দৈনন্দিন ব্যস্ততা।

পেয়াজ কাঁটার সময়টা একটু কষ্টদায়ক। পরিত্রাণের আশায় চালডাল ডট কম আর মীনা ক্লিক খুঁজেও অনিয়ন কাটার এর মত একটা জনগুরুত্তপূর্ণ জিনিস পাচ্ছি না। আমরা কী এমন ই-কমার্স চেয়েছিলাম ? রান্নাবান্না এখন একটা রুটিন কাজ হয়ে গেছে। বিড়বিড় করে সৈকত কুন্ডুর কবিতা আওড়াই –

তোমাকে প্রথম যেদিন চুমু খেয়েছিলাম নন্দিনী,
সেদিন তোমার মুখে মাছের ঝোলের গন্ধ লেগেছিল।